শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
উচ্চ তাপমাত্রা, সংঘাত ও সংকট ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত পঙ্গু হাসপাতালে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ বলেছিল হাসিনা ৫ আগস্টের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি সরকারি ৭ কলেজকে পাঠদানে নতুন কাঠামো ঘোষণা এক বছরে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতায় বিএনপি ৯২%, ঘটনায় জড়িত আগামী সপ্তাহে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প গাজায় জিম্মিদের বিষয়ে বৈঠকে বসবে নিরাপত্তা পরিষদ: ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা, হাসিনার পতনের ইঙ্গিত

গণঅভ্যুত্থানে বারুদের আগুনে জ্বলে উঠেছিল প্রতিবাদী মুখ

রিপোর্টারের নাম / ২৬ জন দেখেছেন
আপডেট : August 1, 2025
গণঅভ্যুত্থানে বারুদের আগুনে জ্বলে উঠেছিল প্রতিবাদী মুখ

প্রতিবাদী মুখকে চুপ করিয়ে দিতে চায়, কেড়ে নিতে চায় মুখের ভাষা; এমনই ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র। তবু তরুণদের মুখের বারুদের আগুন নেভানো যায়নি। পুলিশের যে এপিসি থেকে শহীদ ইয়ামিনের মরদেহ ফেলা হয়েছে, সেসব এপিসির সামনের গ্লাস রং দিয়ে ঢেকে দিয়েছে কেউ। ‘স্বৈরাচারের পা চাটছে’ পুলিশ, এমন স্লোগানে আগুন ঝরেছে ঠাকুরগাঁওয়ের কন্যা রিফা তামান্নার কণ্ঠে। ভাইকে ছাড়াতে প্রিজন ভ্যানের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বোন। নববধূর মেহেদীর রঙ হয়ে ওঠে বিপ্লবের আগুন। গণঅভ্যুত্থানে অসাধারণ অবদান রেখেছে এমন অসংখ্য চরিত্র।

‘মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ

বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস’

সুকান্তের কবিতার মতোই তরুণ ছাত্ররা যেন উসখুস করা একেকটি বারুদ। যারা আগুন জ্বেলেছে টানা দেড় দশকের শক্তিশালী দানব এক স্বৈরাচারের গদিতে।

বারুদের মুখের আগুন বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা পুলিশের। যেন ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়, ৩১ জুলাই দুপুরে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে চলাকালে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে নাহিদের সাথে ঘটে ঘটনা।

ঢাকা নিউ মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এক, দুই, তিন, চার, খুনি হাসিনা গদি ছাড়, গদি কি তোর বাপ-দাদার। এ ধরনের স্লোগান যখন দিচ্ছিলাম তখনই পুলিশ কর্মকর্তা এসে আমার মুখ চেপে ধরে এবং আমাকে বলতে শুরু করে আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে গুম করা হবে। আমাকে শিবির ট্যাগ দেয়া হয়েছিল।’

একদিকে গুলির শব্দ, অন্যদিকে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। এই কাঁপন রাগের, ক্ষোভের।

পিএসসির সদস্য ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পুঞ্জীভূত কিছু ক্ষোভ, কিছু রাগ, কিছু হতাশা, আতঙ্ক, ভয়। মানে একটা ভালো কিছু আপনি বলতে পারবেন না। আমার ভেতর যদি আমি বলি, তাহলে আমি একজন ব্যক্তি-মানুষ, সেখান থেকে আমার প্রতিবাদের জায়গাটা ছিল। আমি একজন শিক্ষক সেই জায়গাটা ছিল।’

ইয়ামিনকে শহিদ করে তার মরদেহ পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ফেলে দেয়া। এই অমানবিক দৃশ্য সেদিন কাকে না কাঁদিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়েদ সাদমান পুলিশের কাছ থেকেই টাকা নিলেন, কিনলেন রং, অতঃপর পুলিশের এপিসির গ্লাসেই করলেন ব্যবহার। একটি প্রতিবাদী শব্দ ‘ভুয়া’।

ইউল্যাবের শিক্ষার্থী সায়েদ সাদমান বলেন, ‘একে যদি আমি এখন ছেড়ে দেই তাহলে এখন গিয়ে শহিদ ইয়ামিনের মতো আমার আর দুই-পাঁচটা ভাইকে শহিদ করবে না বা মেরে ফেলবে না, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। আমার কাছে অপশন ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমার একে থামানো দরকার, আমি থামিয়ে দিয়েছি।’

স্বৈরাচার পতনের এক দফা আন্দোলন রাজধানী ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।

পুলিশের সামনেই ঠাকুরগাঁওয়ের কন্যা রিফা তামান্নার কণ্ঠে এই স্লোগান যেন আগুন ঝরছে। পুলিশের মুখে ওপর পড়ছে চপেটাঘাত।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিফা তামান্না বলেন, ‘বাসা থেকে বাধা দিয়েছিল যে, তোমার যাওয়া হবে না। আমি বাসা থেকে পালিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হই। আসলে আমাকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাঘিনী বলা হয়েছে, আমি ঠাকুওগাঁওয়ের বাঘিনী নই। আমি মনে করি রাজপথে যারা এসেছে, আমাদের ছোট-বড় ভাই-বোনেরা, সবাই একেকজন বাঘ ও বাঘিনী ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান টুম্পা যেন আরেক বারুদ। তার ক্যাম্পাসের সিনিয়র ভাইকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়াতে যেন নাছোড়বান্দা তিনি।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান টুম্পা বলেন, ‘আমি একটা প্রতিবাদের মিসাইল হয়ে দাঁড়ালাম। যদি আমার কাজটা অন্য কাউকে উৎসাহিত করে তাহলে আজকে আমি একজন, কাল আমার জায়গায় ১০০ জন হতে কোনো সমস্যা হবে না।’

পুলিশের গুলির সামনে টিন হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তরুণে নাম নাসির। আরামবাগে তার স্যানিটারি শপ বন্ধ করে যেতেন আন্দোলনে।

নাসির খান বলেন, ‘যখন আমি কারওয়ান বাজারে যাই, কারওয়ান বাজারের একটু আগে, যেটা হচ্ছে সোনারগাঁও হোটেলের সাথে, তখন আমাদের ওপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করলো। তখন আমি টিনটা সোনারগাঁও হোটেল থেকে ছুটিয়ে সেটা দুই টুকরা করে সেটা দিয়ে ঢাল বানিয়ে সামনের দিকে আগাতে শুরু করি।’

মেহেদীর রঙেও যেন বিপ্লবের আগুন। নববধূ লামিয়া ইসলাম তার প্রমাণ রেখেছেন রাজপথে, মিছিলে মিছিলে।

লামিয়া ইসলাম বলেন, ‘এই প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের বের হতে হতো যে আমিও মারা যেতে পারি। তো মারা গেলে যেন আমার মরদেহটা আমার পরিবার পায় এজন্য আমার সঙ্গে সবসময় একটা চিরকুট রাখতাম সবসময়। সে কাগজের ভেতর আমার নিজের নাম, আমার স্বামীর নাম-ফোন নম্বর, আমার মার নাম-ফোন নম্বর লিখে সবসময় সঙ্গে রাখতাম যেন মরদেহ বেওয়ারিশ না হয়।’

তখনও বিজয় নিশ্চিত নয়। এমন সময় শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বরে মজলুম শিক্ষার্থীদের সমর্থনে রিকশাচালক সুজনের স্যালুট। সেই স্যালুট এখনও দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে যেন প্রতিরোধের প্রতীক।

রিকশাচালক সুজন বলেন, ‘আমার এই স্যালুটের মানে ছিল কী? যারা ঘরে বসে ছিলেন, টিভি দেখছিলেন, আপনারা নেমে যান।’

আর যশোরের এই মা আন্দোলনকারীদের শুকনো খাবার আর পানি বিতরণে দৃশ্য চোখে পানি এনে দেয়ার মতোই ছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য খবর...